এই রোদ উঠছে তো আবার বৃষ্টি পড়ছে। এ
রকম আবহাওয়ার মধ্যেই সারা দিন ছোটাছুটি করতে হয়। ফলে ত্বক অনেকাংশেই
নাজুক হয়ে পড়ে, নির্জীব দেখায়। বাড়িতে ও বাইরে দরকার একটু যত্নের।
বর্ষাকাল আমাদের দারুণ প্রিয়। তবে আবহাওয়ার এ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে
আমাদের ত্বকেরও বেশ পরিবর্তন হচ্ছে। তাই বর্ষার এমন সময় প্রয়োজন ত্বকের
বাড়তি যত্ন নেয়া। তবে ত্বকের যত্ন নেওয়ার আগে জেনে নেওয়া প্রয়োজন আপনার
ত্বকের ধরন কী? বর্ষায় সব ধরনের ত্বকই খুব ম্যাড়মেড়ে ও অনুজ্জ্বল হয়ে
পড়ে। এর কারণ বাতাসে বেশি পরিমাণে আর্দ্রতা। বর্ষায় সব ধরনের ত্বকের যত্ন
নিতে আসুন জেনে নিই কিছু ঘরোয়া টিপস। এগুলো মেনে চললে এই বর্ষায় আমরা
নিজেকে স্নিগ্ধ, সতেজ ও আরো সুন্দর রাখতে পারি।
বর্ষায় ত্বকের যত্নঃ
বৃষ্টিতে ভিজে গেলে অনেক সময় শুধু মুখ আর
হাত-পা মোছা হয়। কিন্তু পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে তোয়ালে দিয়ে
মুছে ফেলতে হবে। এ সময় যতটা সম্ভব ত্বক পরিষ্কার রাখতে হবে। টোনিং করতে
হবে নিয়মিত। তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীরা ফ্রিজে বা ঠান্ডা জায়গায় টোনার
সংরক্ষণ করতে পারেন। এতে টোনার ব্যবহারের সময় ভালো ফল পাবেন। অন্য
ত্বকধারীরা সাধারণ তাপমাত্রাতেই টোনার সংরক্ষণ করতে পারেন।গরমের সময়ে শশা
খুব ভালো কাজ করে ডিপ ক্লিনিংয়ের জন্য। ফ্রিজে রাখা ঠান্ডা শশা কুচি করে
ত্বকের ওপর কিছুক্ষণ রেখে দিতে পারেন। এতে ত্বকে উজ্জ্বলতা বাড়বে। তৈলাক্ত
ত্বকে এই ঋতুতে কিছুটা কালচে ভাব চলে আসতে পারে। মুলতানি মাটি আর গোলাপজল
মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ। উপকার পাবেন। ব্রণ বা দাগের জন্য
শশা, গোলাপজল ও কাঁচা হলুদের পেস্ট লাগাতে পারেন। মিশ্র ত্বকের জন্য ডিমের
সাদা অংশ, মধু, লেবুর রস, দুধের সর চমৎকার কাজ করবে। ত্বক পরিষ্কার করে এই
পেস্ট লাগিয়ে রাখতে পারেন, উজ্জ্বলতা আসবে। শুষ্ক ত্বকের জন্য ২০০
মিলিমিটার গ্লিসারিন, ২০০ মিলিগ্রাম গোলাপ জল একটা বোতলে রাখুন ৷ তারপর
সারা শরীরে ভালোভাবে আস্তে আস্তে মাসাজ করতে হবে৷ ম্যাসাজের পর
গ্লিসারিনযুক্ত সাবান দিয়ে গোসল করতে হবে ৷ এতে করে ত্বকের শুষ্ক ভাব দূর
হবে৷ বয়স্ক যারা আছেন, তাদের জন্য একটা ডিমের সাদা অংশ খুব ভালোভাবে এগ
বিটার দিয়ে বিট করে ফোম করতে হবে৷ এবার একটা লেবুর রস দিয়ে আবার ভালোভাবে
বিট করে পুরো মুখ, নাকে লাগিয়ে ১০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে৷ তাহলে বাসায়
বসে আপনি এই বর্ষায় ফিরে পেতে পারেন রিঙ্কেলস ফ্রি টান টান ত্বক৷
চুলের যত্নঃ
রোদ আর বৃষ্টির মাঝে পড়ে চুলের খুব ক্ষতি
হয়। বৃষ্টির পানিতে চুল ভিজে গেলে বাড়ি ফিরে সম্ভব হলে শ্যাম্পু করে
ফেলবেন। এতে চুল ঝরঝরে হয়ে যাবে। না হলে ময়লা আটকে থাকবে চুলের গোড়ায়।
টক দই, পাকা পেঁপে ও কলা একসঙ্গে চটকে প্যাক বানিয়ে চুলে লাগিয়ে রাখুন।
পায়ের ত্বকের যত্নঃ
সময় বৃষ্টির পানিতে হাত-পা ভেজার কারণে
বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে৷ তাই প্রতিদিনই বাইরে থেকে আসার পর
অবশ্যই হালকাভাবে পেডিকিওর ও মেনিকিওর করতে হবে৷ এরপর গরম পানিতে চায়ের
লিকার করে পা দুটিকে ১০-১৫ মিনিট ভেজান।দুই চামচ চিনি আর এক চামচ মধু
মিশিয়ে স্ক্রাবের মতো পায় মাসাজ করুন। পানি দিয়ে ধুয়ে-মুছে ময়েশ্চারাইজিং
ক্রিম বা লোশন লাগান।
বর্ষায় উপকারী আরও কিছু প্যাকঃ
-আলু ও পাতি লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে মুখে লাগান। ১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
-পাতিলেবু রস ও গরুর কাঁচা দুধ একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগান। ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
-শশা এবং টমেটোর রস মিশিয়ে ছেঁকে ফ্রিজে রেখে দিন। ঠান্ডা অবস্থায় মুখে তুলো দিয়ে লাগান।
-হালকা কুসুম গরম পানিতে অল্প কর্পূর এবং
চিনি মিশিয়ে তুলো দিয়ে মুখে লাগান। ১৫ মিনিট পরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে
ফেলুন। এটি ময়েশ্চারাইজারের কাজ করে।
-আপেল বাটা, কয়েক ফোঁটা মধু ও দুধের সর একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখুন। ১৫-২০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুযে ফেলুন।
-কাঁচা হলুদ বাটা, দুধ, গোলাপ ফুলের
পাঁপড়ি বাটা, চন্দন বাটা ও কয়েক ফোঁটা পাতিলেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে
লাগিয়ে রাখুন। ১৫-২০ মিনিট পর স্বাভাবিক পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
-মসুর ডাল বাটা, মুলতানি মাটি, গোলাপ জল,
পাতিলেবুর খোসা বাটা, কয়েক ফোঁটা মধু ও নিমপাতা বাটা একসঙ্গে পেষ্ট তৈরি
করে মুখ-গলায় লাগিয়ে রাখুন ১৫-২০ মিনিট। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
-মুলতানি মাটি, টক দই, গোলাপ জল ও টমেটোর রস একসঙ্গে পেষ্ট তৈরি করে মুখে লাগিয়ে রাখুন ১৫-২০ পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
গোসলের পূর্বে পুরো শরীরে লাগানোর প্যাক:
-বেসন, মধু ও টমেটোর রস মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে লাগান।
-আলু ছেঁচা রস, পালং শাক পাতার রস, দুধ ও মসুর ডাল বাটা মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে লাগান।
-কমলালেবুর খোসা বাটা, দুধ, কাঁচা হলুদ বাটা ও গুঁড়ো দুধ মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে লাগান।
-কাঁচা হলুদ বাটা, বেসন, পাতিলেবুর রস, দুধের সর ও গোলাপ জল মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে লাগান।
প্রত্যেকটি উপকরণ বা মিশ্রণ গোসলের সময়
সাবানের পরিবর্তে (সারা গায়ে ভালো করে মাখুন ও ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করুন)
ব্যবহার করতে পারেন। এতে শরীরের লোমকূপের ভেতর থেকে ময়লা বেরিয়ে এসে ত্বক
কোমল ও মসৃণ হয়ে উঠছে।
সবসময় প্রচুর পানি আর তাজা ফলের রস এবং সবজি খাওয়া উচিত। আর হ্যাঁ, বাইরে বের হওয়ার সময় ছাতা অবশ্যই নিবেন।
লিখেছেনঃ রোজেন
ছবিঃ ক্ল্যাশহট.কম
সুত্রঃ সাজগোজ